ইরানের ঘাঁটি থেকে সিরিয়ায় রাশিয়ার বিমান হামলা [ভিডিও]
প্রকাশ : ১৭ আগস্ট ২০১৬, ১৪:২০
সিরিয়ায় তাণ্ডব চালানো ভয়ঙ্কর ইসলামী মৌলবাদী জঙ্গিসংগঠন ইসলামিক স্টেট ও অন্যান্য সশস্ত্র জঙ্গিগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ধারাবাহিক বিমান হামলা চালাচ্ছে বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী সিরিয়ার মিত্র দেশ রাশিয়া। তবে এবারই প্রথমবারেরমত ইরানের বিমানঘাটি ব্যবহার করে এই হামলা চালিয়েছে দেশটি। রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ তথ্য জানিয়েছেন।
ইরানের ঘাটি ব্যবহার করে সিরিয়ার অভ্যন্তরে জঙ্গিদের উপর বিমান হামলার পর রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, সিরিয়াকে দ্রুত যুদ্ধাবস্থা থেকে বের করে আনতে মিত্র হিসেবে ভূমিকা রাখছে রাশিয়া।
সিরিয়ার বাশার আল আসাদ নেতৃত্বাধীন সরকার দীর্ঘ ৬ বছর ধরে এসব জঙ্গিদের সাথে লড়াই করে যাচ্ছে। প্রায় ১ বছর আগে এ লড়াইয়ে যোগ দেয় মিত্র দেশ রাশিয়া।
দীর্ঘ ৬ বছর ধরে চলমান এ গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত দেশটি থেকে আইএস ও নুসরা ফ্রন্টসহ অন্য জঙ্গিদের নির্মূলের উদ্দেশ্যে চূড়ান্ত অভিযান চালাচ্ছে তারা।
দ্য নিউইয়র্ক টাইমস জানায়, গত এক বছর ধরে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে আসছিল রুশরা। এ সময় তারা সিরিয়ার সরকারের পক্ষে এবং বিদ্রোহী গ্রুপ ও জঙ্গিদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক প্রচারণাও চালিয়েছে। এমনকি সেনা পাঠিয়ে সাহায্যও করেছে দেশটির প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে।
তবে এই প্রথম মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দেশের ঘাঁটি ব্যবহার করে সর্বাত্মক আক্রমণে গেল তারা। এ উদ্যোগকে মনে করা হচ্ছে আসাদকে রক্ষার জন্য তার দুই আন্তর্জাতিক মিত্র ইরান ও রাশিয়ার যৌথ প্রচেষ্টা।
শুধু তাই নয়, মস্কোর সঙ্গে তেহরানের সর্বোচ্চ পর্যায়ের বন্ধুত্ব ও অভ্যন্তরীণ বোঝাপড়ার প্রতীক হিসেবেও এ হামলাকে অভিহিত করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সিরিয়ার যুদ্ধাবস্থা অবসানে মস্কো ও ওয়াশিংটন একমত পোষণ করেছে- রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই সোইগুর এমন ঘোষণার পরের দিনই অভিযান চালিয়েছে রাশিয়া।
রুশ বাহিনী প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, সম্প্রতি সিরিয়া সরকারের হাতছাড়া হয়ে যাওয়া আলেপ্পো শহরটি পুনর্দখলের জন্য জঙ্গিদের আস্তানা টার্গেট করে মুহুর্মুহু বোমা ফেলছে তারা।
এ ব্যাপারে সের্গেই আরও বলেন, ‘সিরিয়ায় শান্তি স্থাপনের জন্য একযোগে কাজ করবে রুশ ও মার্কিনিরা- দু’দেশের মধ্যে এমন চুক্তি হয়েছে। সিরিয়ার যুদ্ধক্ষেত্রেও একসঙ্গে ভূমিকা রাখার জন্য আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি আমরা।’
তবে মার্কিন কর্তৃপক্ষ জানায়, রাশিয়ার সঙ্গে এসব নিয়ে এখনও আলোচনা চলছে। চুক্তি প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হয়নি। তবে সমঝোতা এগিয়ে নেয়া হবে।
এমপি জানান, পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে সিরিয়া সংকটের অবসান ঘটাতে আলোচনা করছে ওয়াশিংটন ও মস্কো কিন্তু কোন কোন জঙ্গিগোষ্ঠীর ওপর হামলা চালানো হবে সে বিষয়ে এখনও পুরোপুরি একমত হতে পারেনি তারা। এতদিন সিরিয়ার জঙ্গিদের মদদ দেয়ার অভিযোগে মার্কিনিদের সমালোচনা করে আসছিল রাশিয়া।
রাশিয়ার দাবি- আল কায়দার সমর্থিত জঙ্গিগোষ্ঠী ‘নুসরা ফ্রন্ট’কে অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করেছে মার্কিন সমর্থিত সিরীয় বিদ্রোহীরা। কিন্তু দু’পক্ষের আলোচনার পর নিঃশঙ্কচিত্তে মঙ্গলবার আলেপ্পো শহরের আইএস ও নুসরা ফ্রন্টের ঘাঁটিগুলোতে বিমান হামলা চালিয়েছে রুশ সেনারা।
এ সময় সু-৩৪ ও টজ-২২এম৩ নামের দুটি দূরপাল্লার রুশ বোমারুবিমানের অভিযানে তাদের ৫টি অস্ত্রাগার ও গোলাবারুদ কারখানা গুঁড়িয়ে দেয়া হয়।
এ ছাড়া এ হামলায় জঙ্গিদের কয়েকটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রসহ ৩টি সামরিক ঘাঁটি নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। ‘সিরিয়ায় সন্ত্রাসীদের আস্তানা’ নামে এ অভিযানের একটি ভিডিও প্রকাশ করেছেন রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই।
দ্য নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, পরমাণু চুক্তির ফলে ইরানের ওপর থেকে বিশ্ব মোড়লদের নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর ক্রমেই তাদের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াচ্ছে রাশিয়া। উভয় রাষ্ট্রই বিশ্ব রাজনীতিতে সিরিয়ার ঘনিষ্ঠ মিত্র বলে পরিচিত। এদের হাত ধরেই মুক্তির পথ খুঁজছে যুদ্ধক্লান্ত সিরিয়া।